BDELIBRARY





গান (রবীন্দ্র)

রবীন্দ্র রচনাবলী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর




অকারণে অকালে মোর পড়ল যখন ডাক
অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন ক’রে
অগ্নিশিখা এসো এসো আনো আনো আলো
অচেনাকে ভয় কী আমার ওরে
অজানা খনির নূতন মণির গেঁথেছি হার
অজানা সুর কে দিয়ে যায় কানে কানে
অধরা মাধুরী ধরেছি ছন্দোবন্ধনে
অনন্তসাগরমাঝে দাও তরী ভাসাইয়া
অনন্তের বাণী তুমি বসন্তের মাধুরী-উৎসবে
অনিমেষ আঁখি সেই কে দেখেছে
অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে কানে
অনেক কথা যাও যে ব’লে কোনো কথা না বলি
অনেক দিনের আমার যে গান
অনেক দিনের মনের মানুষ যেন এলে কে
অনেক দিনের শূন্যতা মোর ভরতে হবে
অনেক দিয়েছ নাথ
অনেক পাওয়ার মাঝে মাঝে কবে কখন একটুখানি পাওয়া
অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে
অন্তরে জাগিছ অন্তরযামী
অন্ধকারের উৎস-হতে উৎসারিত আলো
অন্ধকারের মাঝে আমায় ধরেছ দুই হাতে
অন্ধজনে দেহো আলো
অবেলায় যদি এসেছ আমার বনে
অভয় দাও তো বলি আমার
অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না
অমল কমল সহজে জলের কোলে আনন্দে রহে ফুটিয়া
অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া
অমৃতের সাগরে আমি যাব যাব রে
অরূপ বীণা রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে
অরূপ, তোমার বাণী
অলকে কুসুম না দিয়ো
অলি বার বার ফিরে যায়
অল্প লইয়া থাকি, তাই মোর যাহা যায় তাহা যায়
অশান্তি আজ হানল এ কী দহনজ্বালা
অশ্রুনদীর সুদূর পারে ঘাট দেখা যায় তোমার দ্বারে
অশ্রুভরা বেদনা দিকে দিকে জাগে
অসীম আকাশে অগণ্য কিরণ, কত গ্রহ উপগ্রহ
অসীম কালসাগরে ভুবন ভেসে চলেছে
অসীম ধন তো আছে তোমার, তাহে সাধ না মেটে
অসীম সংসারে যার কেহ নাহি কাঁদিবার
অসুন্দরের পরম বেদনায় সুন্দরের আহ্বান
অয়ি ভুবনমনোমোহিনী, মা
আঁখিজল মুছাইলে জননী
আঁধার অম্বরে প্রচণ্ড ডম্বরু বাজিল
আঁধার এল ব’লে
আঁধার কুঁড়ির বাঁধন টুটে
আঁধার রজনী পোহালো, জগত পূরিল পুলকে
আঁধার রাতে একলা পাগল যায় কেঁদে
আঁধার শাখা উজল করি হরিত-পাতা-ঘোমটা পরি
আঁধারের লীলা আকাশে
আকাশ আমায় ভরল আলোয়
আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে
আকাশ হতে আকাশ-পথে হাজার স্রোতে
আকাশ হতে খসল তারা আঁধার রাতে পথহারা
আকাশ, তোমায় কোন্‌ রূপে মন চিনতে পারে
আকাশতলে দলে দলে মেঘ যে ডেকে যায়
আকাশভরা সূর্য-তারা
আকাশে দুই হাতে প্রেম বিলায় ও কে
আকাশে আজ কোন্‌ চরণের আসা-যাওয়া
আকাশে তোর তেমনি আছে ছুটি
আকুল কেশে আসে চায় ম্লাননয়নে কে গো চিরবিরহিনী
আগুনে হল আগুনময়
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
আগে চল্‌, আগে চল্ ভাই
আঘাত করে নিলে জিনে
আছ আকাশ-পানে তুলে মাথা
আছ অন্তরে চিরদিন, তবু কেন কাঁদি
আছ আপন মহিমা লয়ে মোর গগনে রবি
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে
আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে
আজ খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়
আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে
আজ দখিন-বাতাসে
আজ বরষার রূপ হেরি মানবের মাঝে
আজ বুকের বসন ছিঁড়ে ফেলে দাঁড়িয়েছে
আজ যেমন ক’রে গাইছে আকাশ
আজ নবীন মেঘের সুর লেগেছে আমার মনে
আজ প্রথম ফুলের পাব প্রসাদখানি
আজ বারি ঝরে ঝরঝর ভরা বাদরে
আজ আকাশের মনের কথা ঝরো ঝরো বাজে
আজ আসবে শ্যাম গোকুলে ফিরে
আজ কি তাহার বারতা পেল রে কিশলয়
আজ কিছুতেই যায় না মনের ভার
আজ জ্যোত্‍‌স্নারাতে সবাই গেছে বনে
আজ তালের বনের করতালি কিসের তালে
আজ তোমারে দেখতে এলেম
আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা
আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে কী এনেছিস বল্
আজকে মোরে বোলো না কাজ করতে
আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
আজি যে রজনী যায়
আজি সাঁঝের যমুনায় গো
আজি গোধূলিলগনে এই বাদলগগনে
আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে আসবে যদি শূন্য হাতে
আজি আঁখি জুড়ালো হেরিয়ে
আজি এই গন্ধবিধুর সমীরণে
আজি কমলমুকুলদল খুলিল
আজি কোন্‌ ধন হতে বিশ্বে আমারে
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
আজি তোমায় আবার চাই শুনাবারে
আজি নাহি নাহি নিদ্রা আঁখিপাতে
আজি নির্ভয়নিদ্রিত ভুবনে জাগে, কে জাগে
আজি পল্লিবালিকা অলকগুচ্ছ সাজালো
আজি প্রণমি তোমারে চলিব, নাথ, সংসারকাজে
আজি বরিষনমুখরিত শ্রাবণরাতি
আজি বর্ষারাতের শেষে
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
আজি মেঘ কেটে গেছে সকালবেলায়
আজি মোর দ্বারে কাহার মুখ হেরেছি
আজি শরততপনে প্রভাতস্বপনে
আজি শ্রাবণঘনগহন মোহে গোপন তব চরণ ফেলে
আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে
আজি উন্মাদ মধুনিশি ওগো চৈত্রনিশীথশশী
আজি এ আনন্দসন্ধ্যা সুন্দর বিকাশে, আহা
আজি এ নিরালা কুঞ্জে আমার অঙ্গ-মাঝে
আজি এ ভারত লজ্জিত হে
আজি ওই আকাশ-‘পরে সুধায় ভরে আষাঢ়-মেঘের ফাঁক
আজি কোন্‌ সুরে বাঁধিব
আজি দক্ষিণপবনে দোলা লাগিল বনে বনে
আজি দখিন-দুয়ার খোলা
আজি বহিছে বসন্তপবন সুমন্দ তোমারি সুগন্ধ হে
আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে
আজি মম জীবনে নামিছে ধীরে
আজি মম মন চাহে জীবনবন্ধুরে
আজি মর্মরধ্বনি কেন জাগিল রে
আজি যত তারা তব আকাশে
আজি শুভ শুভ্র প্রাতে কিবা শোভা দেখালে
আজি হেরি সংসার অমৃতময়
আজিকে এই সকালবেলাতে
আধেক ঘুমে নয়ন চুমে
আনন্দ তুমি স্বামী, মঙ্গল তুমি
আনন্দ রয়েছে জাগি ভুবনে তোমার
আনন্দগান উঠুক তবে বাজি
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে
আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে
আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর
আনন্দেরই সাগর হতে এসেছে আজ বান
আন্‌ গো তোরা কার কী আছে
আন্‌মনা আন্‌মনা
আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া
আপন-মনে গোপন কোণে
আপনহারা মাতোয়ারা আছি তোমার আশা ধরে
আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না
আপনারে দিয়ে রচিলি রে কি এ আপনারই আবরণ
আপনি অবশ হলি, তবে
আপনি আমার কোন্‌খানে
আবার শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে
আবার এরা ঘিরেছে মোর মন
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে
আবার মোরে পাগল করে দিবে কে
আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে
আমরা নূতন প্রাণের চর
আমরা তারেই জানি তারেই জানি সাথের সাথী
আমরা চাষ করি আনন্দে
আমরা না-গান-গাওয়ার দল রে
আমরা বসব তোমার সনে
আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ
আমরা খুঁজি খেলার সাথি
আমরা ঝ’রে-পড়া ফুলদল
আমরা দুজনা স্বর্গ-খেলনা গড়িব না ধরণীতে
আমরা নূতন যৌবনেরই দূত
আমরা পথে পথে যাব
আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।
আমরা লক্ষ্মীছাড়ার দল
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
আমাকে যে বাঁধবে ধরে
আমাকে যে বাঁধবে ধরে
আমাদের ভয় কাহারে
আমাদের পাকবে না চুল গো
আমাদের শান্তিনিকেতন আমাদের
আমাদের খেপিয়ে বেড়ায় যে কোথায় লুকিয়ে থাকে রে
আমাদের যাত্রা হল শুরু এখন
আমাদের সখীরে কে নিয়ে যাবে রে
আমার ব্যথা যখন আনে আমায় তোমার দ্বারে
আমার মন, যখন জাগলি না রে
আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও
আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান
আমার জ্বলে নি আলো অন্ধকারে
আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে
আমার নিখিল ভুবন হারালেম আমি যে
আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে
আমার যে গান তোমার পরশ পাবে
আমার অঙ্গে অঙ্গে কে বাজায় বাঁশি
আমার আঁধার ভালো, আলোর কাছে বিকিয়ে দেবে আপনাকে সে
আমার পথে পথে পাথর ছড়ানো
আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই
আমার প্রাণের ‘পরে চলে গেল কে
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন
আমার মন বলে চাই চা ই চাই গো
আমার মন মানে না
আমার মনের কোণের বাইরে
আমার যদি বেলা যায় গো বয়ে জেনো জেনো
আমার যাবার বেলাতে
আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে
আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়
আমার সত্য মিথ্যা সকলই ভুলায়ে দাও
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
আমার অন্ধপ্রদীপ শূন্য-পানে চেয়ে আছে
আমার আর হবে না দেরি
আমার একটি কথা বাঁশি জানে
আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে
আমার ঘুর লেগেছে– তাধিন্‌ তাধিন্
আমার নাইবা হল পারে যাওয়া
আমার প্রিয়ার ছায়া
আমার বনে বনে ধরল মুকুল
আমার ভুবন তো আজ হল কাঙাল
আমার মন কেমন করে
আমার মন তুমি, নাথ, লবে হ’রে
আমার মল্লিকাবনে যখন প্রথম ধরেছে কলি
আমার যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে
আমার যেতে সরে না মন
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
আমার কণ্ঠ তাঁরে ডাকে
আমার জীর্ণ পাতা যাবার বেলায় বারে বারে
আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদলসাঁঝে
আমার না-বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝে
আমার নিশীথরাতের বাদলধারা
আমার নয়ন তোমার নয়নতলে মনের কথা খোঁজে
আমার নয়ন-ভুলানো এলে
আমার প্রাণের মাঝে সুধা আছে চাও কি
আমার মন চেয়ে রয় মনে মনে
আমার মনের মাঝে যে গান বাজে
আমার যে আসে কাছে, যে যায় চলে দূরে
আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে
আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে ফুল ফুটবে
আমার হৃদয়সমুদ্রতীরে কে তুমি দাঁড়ায়ে
আমার আপন গান আমার অগোচরে
আমার এ ঘরে আপনার করে
আমার এ পথ তোমার পথের থেকে
আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ
আমার এই রিক্ত ডালি
আমার কণ্ঠ হতে গান কে নিল ভুলায়ে
আমার কী বেদনা সে কি জানো
আমার গোধূলিলগন এল বুঝি কাছে গোধূলিলগন রে
আমার ঢালা গানের ধারা সেই তো তুমি পিয়েছিলে
আমার নয়ন তব নয়নের নিবিড় ছায়ায়
আমার পরান লয়ে কী খেলা খেলাবে ওগো
আমার প্রাণে গভীর গোপন মহা-আপন সে কি
আমার বাণী আমার প্রাণে লাগে
আমার বিচার তুমি করো তব
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
আমার মাঝে তোমারি মায়া জাগালে তুমি কবি
আমার মালার ফুলের দলে আছে লেখা
আমার মিলন লাগি তুমি
আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে
আমার মুখের কথা তোমার
আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারি নি তোমারে নাথ
আমার যাবার সময় হল
আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি
আমার লতার প্রথম মুকুল চেয়ে আছে মোর পানে
আমার শেষ রাগিণীর প্রথম ধুয়ো ধরলি রে কে তুই
আমার সকল রসের ধারা
আমার সুরে লাগে তোমার হাসি
আমার সোনার বাংলা
আমার হারিয়ে যাওয়া দিন
আমারে বাঁধবি তোরা
আমারে কে নিবি ভাই, সঁপিতে চাই আপনারে
আমারে ডাক দিল কে ভিতর পানে
আমারে পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায় কোন্‌ খ্যাপা সে
আমারে করো তোমার বীণা
আমারে তুমি অশেষ করেছ
আমারে তুমি কিসের ছলে পাঠাবে দূরে
আমারে দিই তোমার হাতে
আমারে যদি জাগালে আজি নাথ
আমায় অভিমানের বদলে আজ নেব তোমার মালা
আমায় থাকতে দে-না আপন-মনে
আমায় ক্ষমো হে ক্ষমো
আমায় মুক্তি যদি দাও বাঁধন খুলে
আমায় বাঁধবে যদি কাজের ডোরে
আমায় ভুলতে দিতে নাইকো তোমার ভয়
আমায় দাও গো ব’লে
আমায় বোলো না গাহিতে
আমি তারেই জানি তারেই জানি আমায় যে জন আপন জানে
আমি একলা চলেছি এ ভবে
আমি তারেই খুঁজে বেড়াই যে রয় মনে আমার মনে
আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী
আমি শ্রাবণ-আকাশে ওই দিয়েছি পাতি
আমি আশায় আশায় থাকি
আমি জ্বালব না মোর বাতায়নে প্রদীপ আনি
আমি এলেম তারি দ্বারে
আমি কান পেতে রই ও আমার আপন হৃদয়গহন-দ্বারে বারে বারে
আমি কারে ডাকি গো
আমি কী ব’লে করিব নিবেদন
আমি কেবলই স্বপন করেছি বপন বাতাসে
আমি কেমন করিয়া জানাব আমার জুড়ালো হৃদয় জুড়ালো
আমি চাহিতে এসেছি শুধু একখানি মালা
আমি জেনে শুনে তবু ভুলে আছি
আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
আমি তোমারি মাটির কন্যা
আমি নিশি নিশি কত রচিব শয়ন
আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি
আমি ফিরব না রে
আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে
আমি যখন ছিলেম অন্ধ
আমি যাব না গো অমনি চলে
আমি রূপে তোমায় ভোলাব না ভালোবাসায় ভোলাব
আমি স্বপনে রয়েছি ভোর
আমি হৃদয়েতে পথ কেটেছি
আমি কেবল তোমার দাসী
আমি কেবল তোমার দাসী
আমি তখন ছিলেম মগন গহন ঘুমের ঘোরে
আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি
আমি বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই
আমি শ্রাবণ-আকাশে ওই দিয়েছি পাতি
আমি সন্ধ্যাদীপের শিখা
আমি সব নিতে চাই
আমি আছি তোমার সভার দুয়ার-দেশে
আমি কী গান গাব যে ভেবে না পাই
আমি কেবল ফুল জোগাব
আমি চঞ্চল হে
আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান
আমি দীন, অতি দীন
আমি ফুল তুলিতে এলেম বনে
আমি ভয় করব না
আমি যখন তাঁর দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই
আমি যে আর সইতে পারি নে
আমি যে গান গাই জানি নে সে কার উদ্দেশে
আমি সংসারে মন দিয়েছিনু
আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল
আমি হেথায় থাকি শুধু গাইতে তোমার গান
আমিই শুধু রইনু বাকি
আর নাই যে দেরি
আর নাই রে বেলা নামল ছায়া ধরণীতে
আর কত দূরে আছে সে আনন্দধাম
আর কি আমি ছাড়ব তোরে
আর নহে আর নহে বসন্তবাতাস কেন আর শুষ্ক ফুলে বহে
আর নহে, আর নয়
আর রেখো না আঁধারে, আমায় দেখতে দাও
আরাম-ভাঙা উদাস সুরে
আরো আঘাত সইবে আমার
আরো আরো প্রভু, আরো আরো
আরো একটু বসো তুমি আরো একটু বলো
আরো কিছুখন নাহয় বসিয়ো পাশে
আরো চাই যে, আরো চাই গো– আরো যে চাই
আলো আমার আলো ওগো আলো ভুবন-ভরা
আলো যে আজ গান করে মোর প্রাণে গো
আলোক-চোরা লুকিয়ে এল ওই
আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও
আলোর অমল কমলখানি কে ফুটালে
আলোয় আলোকময় করে হে এলে আলোর আলো
আষাঢ় কোথা হতে আজ পেলি ছাড়া
আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল গেল রে দিন বয়ে
আসা-যাওয়ার পথের ধারে গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন
আসা-যাওয়ার মাঝখানে
আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা
আহা জাগি পোহালো বিভাবরী
আহ্বান আসিল মহোৎসবে
আয় আয় রে পাগল
আয় আয় আয় আমাদের অঙ্গনে
আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি
আয় তোরা আয় আয় গো
আয় রে আয় রে সাঁঝের বা, লতাটিরে দুলিয়ে যা
আয় রে মোরা ফসল কাটি
ইচ্ছা যবে হবে লইয়ো পারে
ইচ্ছে ! –ইচ্ছে
উজ্জ্বল করো হে আজি এ আনন্দরাতি
উতল হাওয়া লাগল আমার গানের তরণীতে
উতল-ধারা বাদল ঝরে
উদাসিনী -বেশে বিদেশিনী কে সে নাইবা তাহারে জানি
উদাসিনী সে বিদেশিনী কে নাই বা তারে জানি
উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে
এ অন্ধকার ডুবাও তোমার অতল অন্ধকারে
এ আবরণ ক্ষয় হবে গো ক্ষয় হবে
এ কী সুধারস আনে আজি মম মনে প্রাণে
এ কী হরষ হেরি কাননে
এ তো খেলা নয় খেলা নয়
এ দিন আজি কোন্‌ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার
এ পথ গেছে কোন্‌খানে গো কোন্‌খানে
এ পথে আমি-যে গেছি বার বার
এ পরবাসে রবে কে হায়
এ পারে মুখর হল কেকা ওই
এ ভারতে রাখো নিত্য
এ ভালোবাসার যদি দিতে প্রতিদান
এ মণিহার আমায় নাহি সাজে
এ মোহ-আবরণ খুলে দাও, দাও হে
এ যে মোর আবরণ
এ শুধু অলস মায়া
এই মৌমাছিদের ঘরছাড়া কে করেছে রে
এই সকাল বেলার বাদল-আঁধারে
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে
এই মলিন বস্ত্র ছাড়তে হবে
এই আসা-যাওয়ার খেয়ার কূলে আমার বাড়ি
এই কথাটা ধরে রাখিস– মুক্তি তোরে পেতেই হবে
এই কথাটাই ছিলেম ভুলে
এই কথাটি মনে রেখো
এই করেছ ভালো নিঠুর
এই তো তোমার আলোকধেনু সূর্য তারা দলে দলে
এই তো ভরা হল ফুলে ফুলে ফুলের ডালা
এই তো ভালো লেগেছিল আলোর নাচন
এই বুঝি মোর ভোরের তারা এল সাঁঝের তারার বেশে
এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর
এই শ্রাবণ-বেলা বাদল-ঝরা
এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে
এই-যে কালো মাটির বাসা শ্যামল সুখের ধরা
এই-যে তোমার প্রেম, ওগো হৃদয়হরণ
এক ফাগুনের গান সে আমার
এক হাতে ওর কৃপাণ আছে, আর-এক হাতে হার
একটি নমস্কারে, প্রভু, একটি নমস্কারে
একটুকু ছোঁওয়া লাগে
একদা তুমি প্রিয়ে আমারি এ তরুমূলে
একদা প্রাতে কুঞ্জতলে অন্ধ বালিকা
একদিন চিনে নেবে তারে
একবার বলো সখী ভালোবাস মোরে
একমনে তোর একতারাতে একটি যে তার সেইটি বাজা
একলা ব’সে একে একে অন্যমনে
একলা ব’সে হেরো তোমার ছবি
একলা বসে বাদল-শেষে শুনি কত কী
একি গভীর বাণী এল ঘন মেঘের আড়াল ধ’রে
একি আকুলতা ভুবনে
একি এ সুন্দর শোভা ! কী মুখ হেরি এ
একি করুণা করুণাময়
একি মায়া লুকাও কায়া জীর্ণ শীতের সাজে
একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে
একি সুগন্ধহিল্লোল বহিল
এখন আমার সময় হল
এখন আর দেরি নয়
এখনো আঁধার রয়েছে হে নাথ
এখনো কেন সময় নাহি হল
এখনো গেল না আঁধার
এখনো ঘোর ভাঙে না তোর যে, মেলে না তোর আঁখি
এখনো তারে চোখে দেখি নি
এত আনন্দধ্বনি উঠিল কোথায়
এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনে
এতদিন পরে মোরে
এতদিন পরে সখী সত্য সে কি হেথা ফিরে এল
এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে
এনেছ ওই শিরীষ বকুল আমের মুকুল
এবার দুঃখ আমার অসীম পাথার পার হল যে, পার হল
এবার যমের দুয়োর খোলা পেয়ে ছুটেছে সব ছেলেমেয়ে
এবার রঙিয়ে গেল হৃদয়গগন সাঁঝের রঙে
এবার অবগুণ্ঠন খোলো
এবার উজাড় করে লও হে আমার যা-কিছু সম্বল
এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে
এবার বিদায়বেলার সুর ধরো ধরো
এবার ভাসিয়ে দিতে হবে আমার এই তরী
এবার আমায় ডাকলে দূরে
এবার এল সময় রে তোর শুক্‌নো-পাতা-ঝরা
এবার চলিনু তবে
এবার তো যৌবনের কাছে মেনেছ
এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে
এবার বুঝি ভোলার বেলা হল
এবার মিলন-হাওয়ায়-হাওয়ায় হেলতে হবে
এবার সখী সোনার মৃগ
এবেলা ডাক পড়েছে কোন্‌খানে
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমনি ক’রেই যায় যদি দিন যাক না
এমনি করে ঘুরিব দূরে বাহিরে
এরা পরকে আপন করে
এরে ভিখারি সাজায়ে কী রঙ্গ তুমি করিলে
এল যে শীতের বেলা বরষ-পরে
এলেম নতুন দেশে
এস এস বসন্ত ধরাতলে
এসে শরতের অমল মহিমা
এসেছি গো এসেছি মন দিতে এসেছি
এসেছিনু দ্বারে তব শ্রাবণরাতে
এসেছিলে তবু আস নাই জানায়ে গেলে
এসেছে সকলে কত আশে দেখো চেয়ে
এসো এসো পুরুষোত্তম এসো এসো বীর মম
এসো আমার ঘরে
এসো এসো ওগো শ্যামছায়াঘন দিন
এসো এসো প্রাণের উৎসবে
এসো এসো এসো হে বৈশাখ
এসো এসো ফিরে এসো
এসো এসো হে তৃষ্ণার জল
এসো গো জ্বেলে দিয়ে যাও প্রদীপখানি
এসো গো নূতন জীবন
এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে
এসো শ্যামল সুন্দর
এসো হে এসো সজল ঘন বাদলবরিষনে
এসো হে গৃহদেবতা
ও আষাঢ়ের পূর্ণিমা আমার
ও দেখা দিয়ে যে চলে গেল
ও অকূলের কূল ও অগতির গতি
ও আমার চাঁদের আলো
ও আমার দেশের মাটি
ও আমার ধ্যানেরই ধন
ও কথা বোলো না তারে
ও কি এল, ও কি এল না
ও কী কথা বল সখী, ছি ছি, ও কথা মনে এনো না
ও কেন চুরি ক’রে চায়
ও গান আর গাস্‌ নে
ও চাঁদ চোখের জলের লাগল জোয়ার দুখের পারাবারে
ও চাঁদ তোমায় দোলা দেবে কে
ও জলের রানী ঘাটে বাঁধা একশো ডিঙি
ও জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ
ও নিঠুর, আরো কি বাণ তোমার তূণে আছে
ও ভাই কানাই কারে জানাই দুঃসহ মোর দুঃখ
ও মঞ্জরী ও মঞ্জরী আমের মঞ্জরী
ও যে মানে না মানা
ওই অমল হাতে রজনী প্রাতে আপনি জ্বালো
ওই আলো যে যায় রে দেখা
ওই আসনতলের মাটির ‘পরে লুটিয়ে রব
ওই ভাঙল হাসির বাঁধ
ওই জানালার কাছে বসে আছে করতলে রাখি মাথা
ওই মালতীলতা দোলে
ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে
ওই কথা বলো সখী
ওই কি এলে আকাশপারে দিক-ললনার প্রিয়
ওই পোহাইল তিমিররাতি
ওই বুঝি কালবৈশাখী
ওই মধুর মুখ জাগে মনে
ওই মরণের সাগরপারে চুপে চুপে
ওই রে তরী দিল খুলে
ওই শুনি যেন চরণধ্বনি রে
ওই সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে বাজল ভেরী
ওই-যে ঝড়ের মেঘের কোলে
ওকি সখা কেন মোরে কর তিরস্কার
ওকি সখা মুছ আঁখি
ওকে ধরিলে তো ধরা দেবে না
ওকে বাঁধিবি কে রে হবে যে ছেড়ে দিতে
ওকে কেন কাঁদালি
ওকে বল্‌ সখী বল্
ওগো এত প্রেম-আশা প্রাণের তিয়াষা
ওগো কে যায় বাঁশরি বাজায়ে
ওগো শেফালিবনের মনের কামনা
ওগো শোনো কে বাজায়
ওগো কিশোর আজি তোমার দ্বারে
ওগো তোমরা সবাই ভালো
ওগো ভাগ্যদেবী পিতামহী
ওগো দখিন হাওয়া
ওগো আমার চির-অচেনা পরদেশী
ওগো আমার প্রাণের ঠাকুর
ওগো আমার শ্রাবণমেঘের খেয়াতরীর মাঝি
ওগো কাঙাল আমারে কাঙাল করেছ
ওগো জলের রানী
ওগো তুমি পঞ্চদশী
ওগো তোমার চক্ষু দিয়ে মেলে সত্য দৃষ্টি
ওগো তোরা কে যাবি পারে
ওগো দয়াময়ী চোর, এত দয়া মনে তোর
ওগো নদী আপন বেগে পাগল-পারা
ওগো পুরবাসী আমি দ্বারে দাঁড়ায়ে
ওগো পড়োশিনি শুনি বনপথে সুর মেলে
ওগো বধূ সুন্দরী তুমি মধুমঞ্জরী
ওগো শান্ত পাষাণমুরতি সুন্দরী
ওগো সখী দেখি দেখি মন কোথা আছে
ওগো সাঁওতালি ছেলে
ওগো সুন্দর, একদা কী জানি কোন্‌ পুণ্যের ফলে
ওগো স্বপ্নস্বরূপিণী তব অভিসারের পথে পথে
ওগো, পথের সাথি, নমি বারম্বার
ওঠো ওঠো রে– বিফলে প্রভাত বহে যায় যে
ওঠো রে মলিনমুখ, চলো এইবার
ওদের কথায় ধাঁদা লাগে
ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে
ওদের সাথে মেলাও যারা চরায় তোমার ধেনু
ওর ভাব দেখে যে পায় হাসি
ওর মানের এ বাঁধ টুটবে না কি টুটবে না
ওরা অকারণে চঞ্চল
ওরা অকারণে চঞ্চল
ওরে আয় রে তবে মাত্‌ রে সবে আনন্দে
ওরে চিত্ররেখাডোরে বাঁধিল কে
ওরে ঝড় নেমে আয়
ওরে প্রজাপতি মায়া দিয়ে কে
ওরে শিকল তোমায় কোলে করে দিয়েছি ঝঙ্কার
ওরে কী শুনেছিস ঘুমের ঘোরে
ওরে সাবধানী পথিক
ওরে আমার হৃদয় আমার
ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে
ওরে গৃহবাসী খোল্‌ দ্বার খোল্
ওরে জাগায়ো না ও যে বিরাম মাগে
ওরে পথিক, ওরে প্রেমিক
ওরে বকুল পারুল ওরে শাল-পিয়ালের বন
ওরে বকুল পারুল ওরে শালপিয়ালের বন
ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে
ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভূবনের ভার
ওরে মাঝি ওরে আমার মানবজন্মতরীর মাঝি
ওরে যেতে হবে আর দেরি নাই
ওরে, আগুন আমার ভাই
ওরে, কে রে এমন জাগায় তোকে
ওরে, তোরা যারা শুনবি না
ওরে, তোরা নেই বা কথা বললি
ওরে, নূতন যুগের ভোরে
ওলো রেখে দে সখী রেখে দে
ওলো শেফালি ওলো শেফালি
ওলো সই ওলো সই
ওহে সুন্দর মম গৃহে আজি পরমোৎসব-রাতি
ওহে সুন্দর, মরি মরি
ওহে জীবনবল্লভ, ওহে সাধনদুর্লভ
ওহে নবীন অতিথি
কখন বাদল-ছোঁওয়া লেগে
কখন দিলে পরায়ে স্বপনে বরণমালা
কখন যে বসন্ত গেল
কঠিন বেদনার তাপস দোঁহে
কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন
কণ্ঠে নিলেম গান
কত কথা তারে ছিল বলিতে
কত অজানারে জানাইলে তুমি
কত দিন একসাথে ছিনু ঘুমঘোরে
কত যে তুমি মনোহর মনই তাহা জানে
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
কথা কোস্‌ নে লো রাই, শ্যামের বড়াই বড়ো বেড়েছে
কদম্বেরই কানন ঘেরি আষাঢ়মেঘের ছায়া খেলে
কবরীতে ফুল শুকালো
কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে
কবে তুমি আসবে ব’লে রইব না বসে
কমলবনের মধুপরাজি