নৈবেদ্য
রবীন্দ্র রচনাবলী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অচিন্ত্য এ ব্রহ্মান্ডের লোকলোকান্তরে
অন্তরের সে সম্পদ ফেলেছি হারায়ে
অন্ধকার গর্তে থাকে অন্ধ সরীসৃপ
অমল কমল সহজে জলের কোলে
অল্প লইয়া থাকি তাই মোর
আঁধার আসিতে রজনীর দীপ
আঁধারে আবৃত ঘন সংশয়
আঘাতসংঘাত-মাঝে দাঁড়াইনু আসি
আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে
আবার আমার হাতে বীণা দাও তুলি
আমরা কোথায় আছি, কোথায় সুদূরে
আমার এ ঘরে আপনার করে
আমার এ মানসের কানন কাঙাল
আমার সকল অঙ্গে তোমার পরশ
আমারে সৃজন করি যে মহাসম্মান
আমি ভালোবাসি, দেব, এই বাঙালার
এ আমার শরীরের শিরায় শিরায়
এ কথা মানিব আমি, এক হতে দুই
এ কথা স্মরণে রাখা কেন গো কঠিন
এ দুর্ভাগ্য দেশ হতে হে মঙ্গলময়
এ নদীর কলধ্বনি যেথায় বাজে না
এ মৃত্যু ছেদিতে হবে, এই ভয়জালে
এই পশ্চিমের কোণে রক্তরাগরেখা
একদা এ ভারতের কোন্ বনতলে
একাধারে তুমিই আকাশ, তুমি নীড়
ওরে মৌনমূক, কেন আছিস নীরবে
কত-না তুষারপুঞ্জ আছে সুপ্ত হয়ে
কাব্যের কথা বাঁধা পড়ে যথা
কারে দূর নাহি কর। যত করি দান
কালি হাস্যে পরিহাসে গানে আলোচনে
কোথা হতে আসিয়াছি নাহি পড়ে মনে
কোরো না কোরো না লজ্জা হে ভারতবাসী
ক্রমে ম্লান হয়ে আসে নয়নের জ্যোতি
ঘাটে বসে আছি আনমনা
জীবনে আমার যত আনন্দ
জীবনের সিংহদ্বারে পশিনু যে ক্ষণে
তখন করি নি, নাথ, কোনো আয়োজন
তব কাছে এই মোর শেষ নিবেদন
তব চরণের আশা, ওগো মহারাজ
তব পূজা না আনিলে দণ্ড দিবে তারে
তব প্রেমে ধন্য তুমি করেছ আমারে
তাঁরি হস্ত হতে নিয়ো তব দুঃখভার
তাঁহারা দেখিয়াছেন– বিশ্ব চরাচর
তুমি তবে এসো নাথ, বোসো শুভক্ষণে
তুমি মোরে অর্পিয়াছ যত অধিকার
তুমি সর্বাশ্রয়, এ কি শুধু শূন্যকথা
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে
তোমার ইঙ্গিতখানি দেখি নি যখন
তোমার ন্যায়ের দন্ড প্রত্যেকের করে
তোমার পতাকা যারে দাও
তোমার ভুবন-মাঝে ফিরি মুগ্ধসম
তোমারি রাগিনী জীবনকুঞ্জে
তোমারে বলেছে যারা পুত্র হতে প্রিয়
তোমারে শতধা করি ক্ষুদ্র করি দিয়া
ত্রাসে লাজে নতশিরে নিত্য নিরবধি
দীর্ঘকাল অনাবৃষ্টি, অতি দীর্ঘকাল
দুর্গম পথের প্রান্তে পান্থশালা-‘পরে
দুর্দিন ঘনায়ে এল ঘন অন্ধকারে
দেহে আর মনে প্রাণে হয়ে একাকার
না গণি মনের ক্ষতি ধনের ক্ষতিতে
না বুঝেও আমি বুঝেছি তোমারে
নির্জন শয়ন-মাঝে কালি রাত্রিবেলা
নিশীথশয়নে ভেবে রাখি মনে
পতিত ভারতে তুমি কোন্ জাগরণে
পাঠাইলে আজি মৃত্যুর দূত
প্রতিদিন আমি হে জীবনস্বামী
প্রতিদিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর
প্রভাতে যখন শঙ্খ উঠেছিল বাজি
প্রার্থনা
বাসনারে খর্ব করি দাও হে প্রাণেশ
বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয়
ভক্ত করিছে প্রভুর চরণে
মধ্যাহ্নে নগর-মাঝে পথ হতে পথে
মর্তবাসীদের তুমি যা দিয়েছ প্রভু
মহারাজ ক্ষণেক দর্শন দিতে হবে
মাঝে মাঝে কতবার ভাবি কর্মহীন
মাঝে মাঝে কভু যবে অবসাদ আসি
মাতৃস্নেহবিগলিত স্তন্যক্ষীররস
মুক্ত করো, মুক্ত করো নিন্দা-প্রশংসার
মৃত্যুও অজ্ঞাত মোর। আজি তার তরে
যদি এ আমার হৃদয়দুয়ার
যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক্
যে ভক্তি তোমারে লয়ে ধৈর্য নাহি মানে
শক্তি মোর অতি অল্প, হে দীনবৎসল
শক্তিদম্ভ স্বার্থলোভ মারীর মতন
শতাব্দীর সূর্য আজি রক্তমেঘ-মাঝে
সংসার যবে মন কেড়ে লয়
সংসারে মোরে রাখিয়াছ যেই ঘরে
সকল গর্ব দূর করি দিব
সে উদার প্রত্যুষের প্রথম অরুণ
সে পরম পরিপূর্ণ প্রভাতের লাগি
সেই তো প্রেমের গর্ব ভক্তির গৌরব
স্বার্থের সমাপ্তি অপঘাতে অকস্মাৎ
হে অনন্ত, যেথা তুমি ধারণা-অতীত
হে দূর হইতে দূর, হে নিকটতম
হে ভারত, তব শিক্ষা দিয়েছে যে ধন
হে ভারত, নৃপতিরে শিখায়েছ তুমি
হে রাজেন্দ্র তোমা-কাছে নত হতে গেলে
হে রাজেন্দ্র,তব হাতে কাল অন্তহীন
হে সকল ঈশ্বরের পরম ঈশ্বর