BDELIBRARY





প্রেম ও প্রকৃতি

রবীন্দ্র রচনাবলী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর




অনন্তসাগরমাঝে দাও তরী ভাসাইয়া
অবেলায় যদি এসেছ আমার বনে
অসীম সংসারে যার কেহ নাহি কাঁদিবার
আজ বুকের বসন ছিঁড়ে ফেলে দাঁড়িয়েছে
আজি মোর দ্বারে কাহার মুখ হেরেছি
আজি কোন্‌ সুরে বাঁধিব
আপনহারা মাতোয়ারা আছি তোমার আশা ধরে
আবার মোরে পাগল করে দিবে কে
আমরা ঝ’রে-পড়া ফুলদল
আমাকে যে বাঁধবে ধরে
আমার কী বেদনা সে কি জানো
আমার হারিয়ে যাওয়া দিন
আমি স্বপনে রয়েছি ভোর
আয় তোরা আয় আয় গো
উদাসিনী সে বিদেশিনী কে নাই বা তারে জানি
এ কী হরষ হেরি কাননে
এ ভালোবাসার যদি দিতে প্রতিদান
একবার বলো সখী ভালোবাস মোরে
এতদিন পরে সখী সত্য সে কি হেথা ফিরে এল
এবার বুঝি ভোলার বেলা হল
এসো এসো ওগো শ্যামছায়াঘন দিন
ও কথা বোলো না তারে
ও গান আর গাস্‌ নে
ও জলের রানী ঘাটে বাঁধা একশো ডিঙি
ওই কথা বলো সখী
ওকি সখা কেন মোরে কর তিরস্কার
ওকি সখা মুছ আঁখি
ওকে কেন কাঁদালি
ওগো জলের রানী
ওরা অকারণে চঞ্চল
ওরে বকুল পারুল ওরে শালপিয়ালের বন
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
কাছে ছিলে দূরে গেলে
কার হাতে যে ধরা দেব হায়
কালো মেঘের ঘটা ঘটনায় রে
কী ধ্বনি বাজে গহনচেতনামাঝে
কী বেদনা মোর জানো সে কি তুমি জানো
কে যেতেছিস আয় রে হেথা
কেন গো সে মোরে যেন করে না বিশ্বাস
কেমনে শুধিব বলো তোমার এ ঋণ
খুলে দে তরণী খুলে দে তোরা
গন্ধরেখার পন্থে তোমার শূন্যে গতি
গা সখী গাইলি যদি আবার সে গান
গিয়াছে সে দিন যে দিন হৃদয়
গেল গেল নিয়ে গেল এ প্রণয়স্রোতে
গোলাপ ফুল ফুটিয়ে আছে
চরণরেখা তব যে পথে দিলে লেখি
চরাচর সকলই মিছে মায়া ছলনা
চলে যাবি এই যদি তোর মনে থাকে
জলে-ডোবা চিকন শ্যামল কচি ধানের পাশে পাশে
জানি জানি এসেছ এ পথে মনের ভুলে
জীবনে এ কি প্রথম বসন্ত এল
ঝাঁকড়া চুলের মেয়ের কথা কাউকে বলি নি
তরুণ প্রাতের অরুণ আকাশ শিশির-ছলোছলো
তারে দেহো গো আনি
তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা
তুমি তো সেই যাবেই চ’লে
তোরা বসে গাঁথিস মালা
দাঁড়াও মাথা খাও যেও না সখা
দুজনে দেখা হল মধুযামিনী রে
দেখায়ে দে কোথা আছে একটু বিরল
নির্জন রাতে নিঃশব্দ চরণপাতে কেন এলে
পাখি তোর সুর ভুলিস নে
পাগলিনী তোর লাগি
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়
প্রেম এসেছিল নিঃশব্দচরণে
ফিরায়ো না মুখখানি
ফুলটি ঝরে গেছে রে
বঁধু মিছে রাগ কোরো না
বলি ও আমার গোলাপ-বালা
বলি গো সজনী যেয়ো না যেয়ো না
বারে বারে ফিরে ফিরে তোমার পানে
বিধি ডাগর আঁখি যদি দিয়েছিল
বুঝি এল বুঝি এল ওরে প্রাণ
বৃথা গেয়েছি বহু গান
বড়ো বিস্ময় লাগে হেরি তোমারে
ভয় নেই রে তোদের নেই রে ভয়
মন হতে প্রেম যেতেছে শুকায়ে
মনে হল পেরিয়ে এলেম অসীম পথ
যদি ভরিয়া লইবে কুম্ভ
যাই যাই ছেড়ে দাও
যারা বিহান-বেলায় গান এনেছিল আমার মনে
যেন কোন্‌ ভুলের ঘোরে
রিমিকি ঝিমিকি ঝরে ভাদরের ধারা
শুন নলিনী খোলো গো আঁখি
শ্রাবণের বারিধারা ঝরিছে বিরামহারা
সকলই ফুরাইল যামিনী পোহাইল
সখা হে কী দিয়ে আমি তুষিব তোমায়
সন্ন্যাসী ধ্যানে নিমগ্ন নগ্ন তোমার চিত্ত
সহে না যাতনা
সাধের কাননে মোর রোপণ করিয়াছিনু
সেই যদি সেই যদি ভাঙিল এ পোড়া হৃদি
সোনার পিঞ্জর ভাঙিয়ে আমার
স্বপনলোকের বিদেশিনীকে যেন এলে কে
হা সখী ও আদরে আরো বাড়ে মনোব্যথা
হাসি কেন নাই ও নয়নে
হিয়া কাঁপিছে সুখে কি দুখে সখী
হিয়ামাঝে গোপনে হেরিয়ে তোমারে
হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর
হৃদয় মোর কোমল অতি
হৃদয়ের মণি আদরিণী মোর